সিবিএন ডেস্ক:
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধের পাশাপাশি গণভোটের সময় নির্ধারণ নিয়েও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গণভোট কবে হবে—তা নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বিপরীত অবস্থানে রয়েছে। বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট আয়োজনের পক্ষে, আর জামায়াত নভেম্বরের মধ্যে আলাদাভাবে গণভোট চায়। তবে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট না হলে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বয়ং নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ভোটার উপস্থিতি কম হলে গণভোটের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।

সরকারি হিসাব যা-ই থাকুক, অতীতের তিনটি গণভোটে বাস্তবে ভোটার উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। সেই অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে গণভোটের সময় নির্ধারণে সতর্কভাবে ভাবছে সরকার। তাছাড়া পরপর দুটি নির্বাচন আয়োজনের বিপুল বাজেটও সরকারকে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আলাদা কোনো ভোট আয়োজন কমিশনের জন্য কঠিন হবে। কারণ গণভোট আয়োজনও জাতীয় নির্বাচনের মতোই পরিপূর্ণ প্রস্তুতি দাবি করে। তবে যদি জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে প্রত্যেক ভোটারকে দুটি করে ব্যালট দিলেই হবে। এতে বাড়তি প্রস্তুতি ছাড়াই এক দিনে দুই ভোট সম্পন্ন করা যাবে। এতে সরকারের প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে মনে করছেন ইসি কর্মকর্তারা।

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, ‘বাড়তি অর্থ অপচয় না করে এক দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করা সমীচীন। একসঙ্গে দুই ভোট আয়োজন করতে সক্ষম নির্বাচন কমিশন এবং তা সম্ভব।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, সরকার নির্বাচন কমিশনকে গণভোটের সময় নির্ধারণে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুতের মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে। গতকাল কমিশন অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হলে ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে কমিশনের মধ্যেই উদ্বেগ রয়েছে।

নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, গণভোটে ভোটার উপস্থিতি এবারও ৫-১০ শতাংশের বেশি হবে না। কারণ আওয়ামী সমর্থকরা এ ভোট বর্জন করতে পারে, আবার জাতীয় নির্বাচনের আগে আয়োজন হলে বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। ফলে গণভোটের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অন্যদিকে সরকারঘোষিত ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বড় রাজনৈতিক দলগুলো এখন প্রার্থী মনোনয়ন ও প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। এই অবস্থায় নির্বাচনের আগে গণভোট করলে নির্বাচনি প্রস্তুতিতেও ছন্দপতন ঘটতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

অতীতে দেশে তিনটি গণভোট অনুষ্ঠিত হলেও ভোটার উপস্থিতি ছিল আশানুরূপ নয়। সরকারি ফলাফল নিয়েও ছিল কারচুপির অভিযোগ। এসব বাস্তবতায় সরকার জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন নিয়ে দোটানায় রয়েছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট চাইলেও জামায়াত ও তার মিত্ররা নভেম্বরের মধ্যে আয়োজনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে।

ঐক্যমত কমিশন ইতোমধ্যে গণভোটের সময় নির্ধারণের দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। সরকারের এক উপদেষ্টা বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। কবে ভোট করলে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে, সরকার সেই দিকটাই প্রাধান্য দিচ্ছে।’

এ বিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের সদস্য ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘গণভোট আয়োজনের জন্যও জাতীয় নির্বাচনের মতোই প্রস্তুতি প্রয়োজন। সময় নির্ধারণের বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা করি।’

সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ৫০ শতাংশের নিচে ছিল। নির্বাচন কমিশন ও পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট হলে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা থাকবে না। কারণ ভোটাররা একাধিক ব্যালটে ভোট দিতে অভ্যস্ত—যেমন ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হয়ে থাকে। তাই এক দিনে দুই ভোট গ্রহণে বড় কোনো জটিলতা দেখছেন না নির্বাচনসংশ্লিষ্টরা।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক